ট্রাম্পের জয়ে উদ্বেগে অবৈধ অভিবাসীরা II

- আপডেট সময়ঃ ১১:২৩:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪
- / 52
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্ব থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন অনেক অভিবাসী। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ফলে সেই উদ্বেগ এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। কাগজপত্রবিহীন লাখ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ঘোষণার পর দেশটিতে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার অনুমতি না থাকা ব্যক্তিদের গণপ্রত্যর্পণ ছাড়া তার কাছে অন্য কোনো বিকল্প নেই। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, অভিবাসীদের প্রত্যর্পণের খরচ একটি বড় প্রশ্ন নয়।
আমাদের কাছে সত্যিই কোনো বিকল্প নেই। অবৈধ অভিবাসীরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীরা দেশের ক্ষতি করেছে। এখন তাদের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা উচিত নয়, তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।
নতুন মার্কিন প্রশাসন গণপ্রত্যর্পণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্ষম হলেও, এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে একটি বৃহৎ কর্মসূচি চালাতে হবে বলে বিবিসি জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি এক মিলিয়ন মানুষকে বিতাড়িত করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের পর অনেককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটিরও বেশি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী রয়েছে। বলিভিয়ার গ্যাব্রিয়েলা, যিনি চোরাচালানকারীদের গাড়িতে করে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, বর্তমানে ক্লিনারের কাজ করছেন। তিনি আতঙ্কের কথা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, এখানে যারা আছেন তাদের অধিকাংশেরই কাগজপত্র নেই। তিনি উল্লেখ করেন, ট্রাম্প কী করবেন তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে। আমার ধারণা, তারা কর্মস্থল থেকে লোকজনকে নিয়ে যেতে পারে।
শুধু অভিবাসীরা নয়, অনেক মার্কিন নাগরিকও ট্রাম্পের বিজয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন বলে রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা অন্য দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে যাওয়ার বিষয়ে গুগল সার্চে মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, অবৈধ অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়ে কানাডায় প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে কানাডা পুলিশ ইতোমধ্যে অভিবাসীদের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের সার্জেন্ট চার্লেস পোয়োরিয়া উল্লেখ করেছেন, ট্রাম্পের বিজয়ের ফলে কানাডায় অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশঙ্কায় তারা কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার অভিবাসী কানাডায় প্রবেশ করতে পারে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আমরা কিছু মাস আগে থেকেই জানতাম যে আমাদের একটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ যদি ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসেন, তাহলে অনেকেই কানাডার দিকে চলে আসবেন। এর ফলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশী ও অবৈধ অভিবাসীরা কুইবেক ও কানাডার দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
২০১৭ সালে ট্রাম্প প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, তার কয়েক দিনের মধ্যেই হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় প্রবেশ করেছিলেন। এবারও একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কানাডার বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের একের পর এক অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের নতুন চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটি দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স।