চট্টগ্রামে বিমানের ভেতরেই আধুনিক চক্ষু হাসপাতাল।

- আপডেট সময়ঃ ১১:৫০:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
- / 60
দূর থেকে দেখলে মনে হয় এটি যাত্রীদের জন্য অপেক্ষমাণ একটি বিমান। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলে চমকে উঠতে হয়। এটি একটি সম্পূর্ণ চক্ষু হাসপাতাল। বিমানের অভ্যন্তরে রয়েছে চক্ষু চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ব্যবস্থা। একটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম বিমানটিতে বিদ্যমান। এখানে রয়েছে হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ, অক্সিজেন, স্যাচুরেশন, চোখের রেটিনাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। অস্ত্রোপচারের জন্য আধুনিক অপারেশন থিয়েটারও রয়েছে। জটিল রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রও স্থাপন করা হয়েছে।
এগুলো সবই রয়েছে বিমানে স্থাপিত বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র ‘অরবিস উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালে’। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থা অরবিস ইন্টারন্যাশনালের বিমানটি গত ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানে চক্ষু চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে।গত রোববার থেকে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলে দেড়শ জনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
রোববার সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে বিশাল আকৃতির এমডি-১০ বিমানটি। সাধারণত এই ধরনের বিমান চারশো যাত্রী পরিবহন করতে সক্ষম। কিন্তু এই বিশেষ বিমানের অভ্যন্তরে যাত্রীদের বসার জন্য কোনো আসন নেই। বিমানের ভেতরে হাসপাতালের মতো চারটি কক্ষ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে প্রতি কক্ষে ৫-৬ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে চক্ষু চিকিৎসা এবং সার্জিক্যাল প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
একটি প্রশিক্ষণ কক্ষে চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চক্ষু চিকিৎসক তামান্না মোরশেদ মন্তব্য করেন, চোখের বিভিন্ন বিষয় আমরা মূলত বইয়ের মাধ্যমে শিখেছি। এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ আমাদের কর্মজীবনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমি আশা করছি, এখান থেকে যন্ত্র পরিচালনার দক্ষতা অর্জন করতে পারব।
অন্যদিকে, চিকিৎসক শহিদুল ইসলাম জানান, অত্যাধুনিক যন্ত্র ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যা পেশাজীবীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তবে, সবাই এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পান না। অনলাইনে পাঁচটি পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিরা এই প্রশিক্ষণের সুযোগ লাভ করেন। প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে নেই। কিছু সরকারি হাসপাতালে এসব যন্ত্র থাকলেও চিকিৎসকদের ব্যবহারে দক্ষতা কম।
বিমানে একটি বৃহৎ কক্ষ বিদ্যমান, যেখানে একসঙ্গে ৫০ জন শিক্ষার্থী ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইন ক্লাসে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা যুক্ত হন। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণের জন্য নয়, নির্বাচিত ১০০ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। অস্ত্রোপচারের জন্য একটি বিশেষ কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখানে একটি হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা সকল সরঞ্জাম বিদ্যমান।
অরবিস ইন্টারন্যাশনাল একটি মার্কিন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক অলাভজনক সংস্থা। এটি বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে দৃষ্টি সুরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিমানটি ইতোমধ্যে ৯৫টি দেশে সফর করেছে। সর্বশেষ মঙ্গোলিয়ায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করে বাংলাদেশে এসেছে। পরবর্তী গন্তব্য রোমানিয়া।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুনির আহমেদ উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় চক্ষু পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা এবং চোখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা। অরবিস চোখের ছানি, রেটিনার ক্যান্সার, গ্লুকোমা, অকুলোপ্লাস্টি এবং কর্নিয়া রোগের চিকিৎসা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা। ১৯৮৫ সাল থেকে অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ১১ বার প্রায় ১ হাজার ৮০০ চক্ষু পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। অরবিসের সহায়তায় বাংলাদেশের চিকিৎসকরা দেশেই আন্তর্জাতিক মানের চক্ষুসেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডেরেক হডকি বলেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো একটি শক্তিশালী এবং টেকসই চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এই প্রশিক্ষণ বাংলাদেশের চোখের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।